সংবাদচর্চা রিপোর্ট
সমাজের অন্য সব ক্ষেত্রের মতো নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতেও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ কমে যাচ্ছে। নিজ দল ও বিরোধী দলের বেলায়ও একই রকম মনোভাব দেখা যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতার প্রতি সৎভাব দেখালেও নিজের দলের নেতাকে ল্যাং মেরে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। অনুগত জুনিয়রদের দিয়ে সিনিয়রদের অপমানিত করার একটা অলিখিত নিয়ম করে নিয়েছে কেউ কেউ। প্রবীণরা বলছেন, অতীতে এমনটা ছিলো না।
একাধিক রাজনীতিকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, রাজনীতির রুট পরিবর্তন হয়েছে। আগের মতো আর রাজনীতিতে ভক্তি শ্রদ্ধা নেই। পদের জন্য আর টাকা কামানোর জন্য এখন অযোগ্যরাও রাজনীতিতে ঢুকছে। তাদের টার্গেট থাকে, কত বিনিয়োগে কত লাভ সেদিকে। রাজনীতি যে সমাজ সেবা, মানুষের উপকার করা তা তারা মোটেও মনে করে না।
তবে অতীতে রাজনীতিকরা মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা নিয়ে রাজনীতিতে আসতো বলে জানান প্রবীণ রাজনীতিকরা। ওই সময়ে একে অপরের প্রতি দারুণ শ্রদ্ধাবোধ দেখাতো। ভিন্ন দল করলেও শ্রদ্ধার জায়গায় কোন কমতি ছিলো না। একজন প্রবীণ রাজনীতিক জানান, পাকিস্তান আমলে সারা দেশে ছাত্রলীগ নেতাদের নামে হুলিয়া হয়। জামিন নেয়া ছিলো খুব কষ্টকর। তখন নারায়ণগঞ্জের মুসলিম লীগের বড় নেতা ছিলেন জালাল হাজী। তিনি তখন ছাত্রলীগের নেতাদের জামিনদার হয়ে আদালত থেকে তাদের জামিন করান। তিনি আরও জানান, ওই সময়ে রাজনীতিতে একটা সুবাতাস ছিলো। ভিন্ন ভিন্ন দল করলেও একে অপরকে সম্মান জানাতে কুন্ঠাবোধ করতেননা।
স্বদেশী আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী ‘৫২’র ভাষা আন্দোলন সব সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা গৌরবজ্জ্বল। মুক্তিযুদ্ধেও এ অঞ্চলের অবদান কম নয়। ‘৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এখানকার রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা। পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠার ইতিহাসেও মিশে আছে এ শহর। তেমনি অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির প্রতিষ্ঠা লগ্নে ভূমিকা রয়েছে এ জেলার একাধিক রাজনীতিকের। দুই দলেই দাপুটে ভূমিকা দেখা গেছে জেলার রাজনীতিকদের। খান সাহেব ওসমান আলী, মোস্তফা সারওয়ার, একেএম সামসুজ্জোহা, আবুল কাশেম চৌধুরী, জালাল হাজী, আব্দুল মতিন চৌধুরী, এডভোকেট মন্টু ঘোষ, অধ্যাপিকা নাজমা রহমানদের মতো রাজনীতিকরা যার যার দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সুযোগ পেয়েছেন।
অনেকের মতে, দেশ স্বাধীনের পর বিশেষ করে ‘৭৫’র পর রাজনীতিতে অশনী সংকেত দেখা দেয়। এরপর থেকে রাজনীতিতে ভিন্ন পেশার লোকজন ঢুকতে শুরু করে। এরশাদ সরকারের আমলেও তা বজায় থাকে। রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি-জাতীয় পার্টি এ ধারা আগে শুরু করে। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে হেরে ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামীলীগও কিছুটা সেদিকে ঝুঁকে। এখন সব বড় বড় দলেই রাজনীতিকদের চেয়ে ব্যবসায়ীদের প্রাধন্য বেশী। তবে ইদানিং রাজনীতি ভিন্ন মোড় নিয়েছে বলে মনে করেন রাজনীতি বোদ্ধারা। তাদের মতে, ২০০১ এ বিএনপি ক্ষমতায় এসে বিরোধী দলকে পুলিশ দিয়ে মোকাবেলা শুরু করে। ওই সময় তারা সামান্য করলেও পরবর্তীতে আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর তা আরও বাড়ে। এখন রাজনীতি অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন অনেক রাজনীতিক। তাদের মতে, বিভিন্ন পেশার মানুষ রাজনীতিতে ঢুকে প্রথম ধাক্কা মারেন। এরপর থেকে বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না করে প্রশাসন দিয়ে মোকাবেলার কৌশল নেয়া হয়। রাজনীতি করার ধরণ দিন দিন বদলে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তারা।